শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাবার কবরটা শনাক্ত করতে পারলেও বাবাকে হারানোর কষ্ট কিছুটা কমত

বাবার কবরটা শনাক্ত করতে পারলেও বাবাকে হারানোর কষ্ট কিছুটা কমত

স্বদেশ ডেস্ক:

বাবার কবরটা অন্তত শনাক্ত করতে পারলেও বাবাকে হারানোর কষ্ট কিছুটা কমত। আজ শনিবার সকালে সময় বরগুনার পোটকাখালী গণকবরে লাশ দাফন হওয়া বাবা আবদুল হামিদ হাওলাদারের স্মরণে দোয়া মোনাজাত শেষে অশ্রুশিক্ত চোখে কথাগুলো বলছিলেন ছেলে দুলাল হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘মোগো আগের বছর ঈদ ছিল। আর এ বছর আমাদের ঈদ আনন্দ নেই। অভিযান ১০ লঞ্চ আমাদের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। আমার বাবাকে ছাড়া কী করে ঈদ করি। অন্তত বাবার কবরটা শনাক্ত করতে পারলেও বাবাকে হারানোর কষ্ট কিছুটা কমত।’

জানা যায়, ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চ গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে পৌঁছালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ৫০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া নিখোঁজ হন আরো অনেকে। ওই দুর্ঘটনার সাত মাস পর এসেছে ঈদ। তবে খুশির বদলে কষ্ট তাড়া করছে স্বজনহারাদের। লঞ্চ দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের একজন বামনা উপজেলার গোলাঘাটা গ্রামের দুলাল। এ দুর্ঘটনায় বাবা আবদুল হামিদ হাওলাদারকে হারিয়েছেন তিনি।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সুগন্ধ্যা ট্র্যাজেডিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫০ জন। এর মধ্যে ২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪১ জনের লাশ উদ্ধার হয় ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ছয়জন মারা যান। জানুয়ারির ২ ও ৩ তারিখে ঢাকায় চিকিৎসাধীন দগ্ধ দুজন ও সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে এক নারী ও তার স্বামী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মারা যান।

নিহতদের মধ্যে শনাক্ত না হওয়ায় ২৩ জনকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী এলাকায় গণকবরে ও একজনকে ঝালকাঠিসহ ২৪ জনকে দাফন করে জেলা প্রশাসন। বাকি ২৬ জনের লাশ শনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনরা।

এসময় দুলাল জানান, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তার বাবাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যান তার মা ও বোন। চিকিৎসা শেষে ২৩ ডিসেম্বর অভিযান-১০ লঞ্চে বরগুনার উদ্দেশে ফিরছিলেন তারা। রাতে ওই লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার মা ও বোন অগ্নিদগ্ধ হন। আর বাবা আবদুল হামিদ হাওলাদার (৬০) এখনো নিখোঁজ।

কান্নাজড়িত কন্ঠে দুলাল আরো বলেন,অজ্ঞাত কবরের মধ্যে হয়তো আমার বাবাও রয়েছেন। আমরা ডিএনএ নমুনা দিয়েছি। এখন শুধুমাত্র বাবার কবরটা বুঝে পাওয়ার আশায় আছি। তিনি আরো বলেন, আমার বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে আমাদের পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। বাবার ঋণ ছিল, তা পরিশোধ করার সমর্থ আমার নেই। যা ছিল অগ্নিদগ্ধ মা-বোনকে চিকিৎসা করাতে শেষ হয়ে গেছে। দুলাল ছাড়াও গণকবরে আসছেন সুগন্ধ্যা ট্রাজেডির অনেক স্বজনহারা। অজ্ঞাতদের কবরের পাশে করছেন আহাজারি।

ঘটনার পর বরগুনা জেলা প্রশাসন নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৩২ জন নিখোঁজ থাকার তথ্য দিয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ নিখোঁজ ৩২ জনের বিপরীতে তাদের ৫১ জন স্বজনের ডিএনের নমুনা সংগ্রহ করে। গত ১৯ এপ্রিল সেই ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট প্রকাশ হলেও দফতরিকভাবে তা পায়নি জেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শুভ্রা দাস বলেন, ‘শনাক্ত হওয়া মৃতদের স্বজনদের আমরা প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। অজ্ঞাতদের শনাক্ত করতে ডিএনত্র নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার কোনো প্রতিবেদন আমরা দফতরিকভাবে পাইনি। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা পেলে স্বজনরা যদি দাবি করে থাকে তবে লাশ আমরা হস্তান্তর করতে পারব।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877